অবশেষে জিমনেশিয়াম দখলকারীদের জয় হলো। প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন অন্তত ৪০০ জন অভিবাসী, যাদের মধ্যে ৩৫০ জন ছিলেন গৃহহীন। এদের মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ জন আফ্রিকার সাব সাহারা এবং আফগানিস্তান থেকে এসেছেন, ১৩৬ জন অবিবাহিত পুরুষ, ২৬ জন অবিবাহিত নারী, ৮১টি পরিবার, ২২জন যুগল এবং ৭২ জন অভিভাবকহীন শিশু-কিশোর
।
আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেয়া সংস্থা কালেক্টিফ রিকুইজিশন তাদের ফেসবুক পাতায় জানায়, আন্দোলন সফল হওয়ায় অসংখ্য পরিবার, অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং অবিবাহিত পুরুষ ও নারীরা রাস্তায় না থেকে তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবে। এ সপ্তাহে তাদের মধ্যে তেমন কাউকে আর জরুরি আবাসন সেবার হটলাইন ১১৫-এ কল দিতে হয়নি।
অভিবাসীদের জন্য কাজ করা সম্মিলিত সংস্থা ইতুপিয়া৫৬ এর প্যারিস শাখার সদস্য মায়েল দ্য মারসেলেয়ুস এএফপি কে বলেন, “আমরা রাস্তায় থাকা এসব পরিবার, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও বাকিদের জন্য শুধু একটি বাসস্থানের আবেদন জানিয়েছিলাম। কারণ আমাদের পরিচালিত সাময়িক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে পড়ছিলো।’’
“আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে”
অধিকার কর্মীরা বলছেন, এত কিছুর পরও এখনো পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এনজিও ইতুপিয়া৫৬ জানায়, “প্রতিবছর প্যারিসে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়াটা একটা দুঃসংবাদ। এই বিভাগের কতজন মানুষ গৃহহীন এই সংখ্যাটা বলা কঠিন, কারণ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে শরণার্থীরা। এদের মধ্যে অনেক নির্বাসিত ব্যক্তি ও শরণার্থী রয়েছেন যারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমানা অতিক্রম করেছেন। তারা এখন ফ্রান্সে যথাযথ সুরক্ষা এবং অভ্যর্থনার অভাবে কঠিন সময় পার করছেন।’’
তবে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব কারণ ফ্রান্সে সর্বমোট ৩১ লক্ষ বাসা খালি পড়ে আছে। যার মধ্যে ইল-দ্য-ফ্রঁস বিভাগে আছে প্রায় চার লাখ এবং প্যারিসে এক লাখ ১৭ হাজার। এই তালিকায় খালি জায়গা, দোকান কিংবা অফিস স্পেসকে ধরা হয়নি বলে জানান অধিকারকর্মীরা।
ইতুপিয়া৫৬ এর অন্য একজন কর্মকর্তা কেরিল থেওরিলা অবস্থান কর্মসূচির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমরা যখন সরকারি স্থাপনা দখলের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তখন এর অর্থ হল আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনা করা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন”।
ইনফোমাইগ্রেন্টসকে এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আর বেশি মানুষ জড়ো করার চেষ্টা করিনি। রাস্তায় আরো তিনশ’র বেশি গৃহহীন মানুষ আছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে একটি বদ্ধ জিমনেশিয়ামে একসাথে এত লোক জড়ো করা অত্যন্ত কঠিন এবং ভয়াবহ হতো, তাই আমরা বাকিদের অংশগ্রহণ করতে মানা করি।’’
আবারো রাস্তায় ফিরে আসা
সংস্থাটি আবেদন জানিয়েছে, “জানুয়ারি মাসে প্যারিসের ১৬ তম ডিসট্রিক্টে একটি অব্যবহৃত স্কুল, ফেব্রুয়ারিতে হোটেল দিও এবং মার্চের শেষে রিপাবলিক চত্ত্বর দখলের পরে এটি ছিল চতুর্থ যৌথ অভিযান। সবাইকে শান্তিপূর্ণ এই অভিযানে সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। এ পর্যন্ত আমরা এক হাজার ৬০ জনকে রাস্তা থেকে একটি থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দিতে সহায়তা করতে পেরেছি। নির্বাসিত এবং শরণার্থীদের জন্য ফ্রান্সে একটি যথাযথ অভ্যর্থনা নীতি প্রণয়ন করা উচিত৷’’
তাদের মতে, শেষ তিনটি অভিযানের কারণে ৭২০ জনকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে কেরিল থিওরিলা’র মতে, আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে আবার রাস্তায় ফিরে এসেছেন।
এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে তিন মাস আগে ফ্রান্সে আসা ৩০ বছর বয়সি ক্যামেরুনিয়ান নাগরিক আর্মেল অলিভিয়া সোনফাকের সাথে। তার তিন বছর বয়সি যমজ সন্তানদের নিয়ে কিছুদিন একটি গির্জায়, কয়েকদিন রাস্তায় এবং কয়েকদিন সরকারি হোটেলে আসা যাওয়ার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে।
“সোমবার থেকে আমি আবার রাস্তায় আছি। রিপাবলিক চত্ত্বরে দখল অভিযানে অংশগ্রহণের পর আমাকে এক সপ্তাহের জন্য হোটেলে রাখা হয়। কিন্তু পরে আবার আমাকে রাস্তায় ফিরে আসতে হয়, এরপর আবার অন্য একটি হোটেলে দশ দিন থাকতে দেয়া হয়” তিনি এএফপি কে বলেন।
জরুরি আবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিযুক্ত প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ইয়ান ব্রোসাত বলেন, “শীতকালীন ছুটি শেষে গ্রীষ্মে অভিবাসন প্রক্রিয়া আবার শুরু হওয়ার সাথে সাথে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা সরকারের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে একটি স্থায়ী এবং কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে চাই। ‘কারণ সবার জন্য একটি ছাদ’ রাষ্ট্রের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনি দায়িত্ব”।সুত্র :ইনফো মাইগ্রেন্টস বাংলা